আশ্রম হিন্দুশাস্ত্রানুযায়ী মানবজীবনের চারটি স্তরবিশেষ, যথা ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। প্রাচীন ভারতে যথাসম্ভব শাস্ত্রের এ বিধান অনুযায়ী মানবজীবন পরিচালিত হতো। ব্রহ্মচর্যাশ্রমে উপনয়নকৃত বালক নিয়মনিষ্ঠ হয়ে গুরুগৃহে থেকে বেদ প্রভৃতি শাস্ত্র শিক্ষা করত। শিক্ষা সমাপনান্তে গুরুর আদেশ অনুযায়ী তার গার্হস্থ্যশ্রম
মার্কেন্ড পুরান, শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্ বা দেবীভাগবত পূরণে উল্লেখ রয়েছে ঋষি মেধসের এই আশ্রমের। মার্কেন্ড পুরান অনুযায়ী দেবী দুর্গা মর্তলোকে সর্ব প্রথম এই ঋষি মেধসের আশ্রমে অবতীর্ণ হন। ঋষি মেধসের এই আশ্রম অবিভক্ত বঙ্গএর চট্টগ্রামে অবস্থিত। শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থে কথিত রয়েছে, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি মহর্ষি মার্কেন্ডের কাছেই প্রথম দেবীমাহাত্ম্যম্ এর পাঠ নেন এবং এই স্থানে প্রথম দুর্গাপুজো করেন।
বরিশালের গৈলা অঞ্চলের পণ্ডিত জগবন্ধু চক্রবর্তীর বাড়িতে ১২৬৬ বঙ্গাব্দে ২৫ অগ্রহায়ণ মাসে চন্দ্রশেখর নামে একপুত্র সন্তানের জন্ম হয় । জন্মের দু’বছর পর জগবন্ধু মারা যান। মায়ের অনুরোধে চন্দ্রশেখর ১৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন মাদারীপুরের রাম নারায়ণ পাঠকের কন্যা বিধুমুখীকে। ছয় মাস পর মারা যান স্ত্রী। এর কিছুদিন পর মাও মারা যান। সংসারে আপন বলতে আর কেউ রইল না। একাকীত্ব জীবনে এসে চন্দ্রশেখর নানা বেদ শাস্ত্র পাঠ করে হয়ে ওঠেন পরিচিত পণ্ডিত। তখন নাম হলো শীতলচন্দ্র। তিনি মাদারীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত কলেজসহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে যোগীপুরুষ স্বামী সত্যানন্দের সাথে সাক্ষাতের পর চন্দ্রশেখরের মনে চন্দ্রনাথ দর্শনের আগ্রহ জন্মে। তিনি চলে আসেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। সেখানে তিনি বৈরাগ্য ধর্ম গ্রহণ করেন। ততদিনে চন্দ্রশেখর হয়ে ওঠেন বেদানন্দ স্বামী। সেখানে যোগবলে বেদানন্দ দর্শন লাভ করেন চন্দ্রনাথের (শিব)। চন্দ্রনাথ সেই দর্শনে বেদানন্দকে পাহাড়ের অগ্নিকোণে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার আদেশ দিয়ে বলেন, ‘দেবীর আবির্ভাবস্থান মেধস আশ্রম পৌরাণিক শত সহস্র বছরের পবিত্র তীর্থভূমি। কালের আবর্তে সেই পীঠস্থান অবলুপ্ত হয়ে পড়েছে। তুমি স্বীয় সাধনবলে দেবীতীর্থ পুনঃআবিষ্কার করে তার উন্নয়নে মনোনিবেশ কর। দেবী দশভুজা দুর্গা তোমার ইচ্ছ পূরণ করবে।’ দৈববলে প্রভু চন্দ্রনাথের আদেশে বেদানন্দ স্বামী পাহাড়-পর্বত পরিভ্রমণ করে পবিত্র এ তীর্থভূমি মেধাশ্রম আবিষ্কার করেন।[৩][৪][৫]
মেধস মুনি রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধিকে প্রথম দুর্গোৎসবের পাঠ দিয়েছিলেন। রাজা ও বৈশ্য নিজেদের দুরবস্থা থেকে মুক্ত হতে চট্টগ্রামের মেধসের এই আশ্রমে মাটি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করেন এবং মর্তলোকে প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। সেই থেকে আজ অবধি, এখানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এটি বাংলাদেশের হিন্দু বাঙালিদের অন্যতম বৃহৎ তীর্থস্থান। অনুমান করা হয়, এই স্থান থেকেই সমগ্র বঙ্গদেশে বাঙালিদের মধ্যে ও পরে সমগ্র ভারতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্গাপুজো জনপ্রিয়তা লাভ করে।[১]
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান(বর্তমান বাংলাদেশে) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনী এই আশ্রম ও আশ্রম সংলগ্ন মন্দির ধ্বংস করে দেয়। পরে স্থানীয় হিন্দুদের সহযোগিতায় এই মন্দির ও আশ্রম পুনঃনির্মাণ করা হয়।[৪][৬]
আশ্রমে চণ্ডী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, তারা কালী মন্দিরসহ ১০টি মন্দির রয়েছে। রয়েছে সীতার পুকুর।আশ্রমের প্রধান ফটক দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার গেলে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। প্রায় ১৪০টি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলে মেধস মুনির মন্দির চোখে পড়বে। এই মন্দিরের পরই দেবী চণ্ডীর মূল মন্দির। এর একপাশে সীতার পুকুর, পেছনে রয়েছে ঝরনা। মন্দিরের পেছনে সাধু সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে দোতলা ভবন।প্রায় ৬৮ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত হয়েছে এই মন্দিরে প্রতিবছর মহালয়ার মাধ্যমে দেবী পক্ষের সূচনা হয়এই মন্দিরে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS