বর্তমানে সিলেটের সব থেকে বেশি জনপ্রিয় এই জায়গায় বেড়াতে যাওয়া সময় এখনই। সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার গোয়াইনঘাটের রস্তুমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি।
এর পরেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশিই সবুজ, পাহাড়ের গায়ে ঝরণাগুলোও প্রাণবন্ত। তবে এসব ঝরণার কাছে গিয়ে পানি ছোঁয়ার কোনও সুযোগ নেই। শুধুই দুই চোখ ভরে উপভোগ করা। কারণ সবগুলোই ভারতে।
অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের সমাহার। কল্পনাও করতে পারবেন না বিছনাকান্দির সৌন্দর্য। বিস্ময়কর মানে এতটাই বিস্ময়কর। কাছেই দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা আর সে পাহাড় থেকে প্রবাহিত সু-শীতল ঝর্নাধারার তীব্র প্রবাহ। এখানে পাথরে ভরা পুরো এলাকা। পানিতে বিছানো রয়েছে মোটা-শক্ত, ছোট-বড় হাজার কোটি পাথর। সে সব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরণ। আবার কোনোটা বা ধবধবে সাদা।
এ সব পাথর মেঘালয় পর্বতমালার ওপর থেকে প্রবাহিত ঝর্নার ধারায় চলে এসেছে পিয়াইন নদীর বিছনাকান্দি অংশে। মুগ্ধ চিত্তে চেয়ে চেয়ে দেখতে বিছনাকান্দির চারপাশ।যত দেখবেন ততই মুগ্ধ হবেন। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে পাথর ভরা পিয়াইন নদীর সু-শীতল সেই জলে। শরীর এলিয়ে দিয়েই পাথর জলের বিছানায় আপনার মনে হবে, আহা কী শান্তি! যে বিছানা ছেড়ে হয়তো কোন কালেই উঠতে ইচ্ছে করবে না আপনার!
বর্ষায় পিয়াইন থাকে পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ। তবে শীতে শুকিয়ে পানি তলায় ঠেকে। তখন পিয়াইন হেঁটেই পার হওয়া যায়। তবে বর্ষায় ভরা পিয়াইন নদীতে চলতে চলতে এর দুই পাশের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হবেন যে কেউ। এর চারপাশটাই যেন ছবির মতো।
পিয়াইনে চলতে চলতে দূরে দেখা যাবে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় এই পাহাড়ের কোলে এসে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কেয়ারি। বর্ষায় পাথর কেয়ারি পানিতে ডুবু ডুবু। এখান থেকে একটু সামনেই সীমান্ত ঘেঁষা পাথর-জলের বিছনাকান্দি।
বিছনাকান্দিতে পাথর-জলের বিছানা মুগ্ধ হওয়ার মতো। এখানে পাথরের বিছানার উপরে পাশের পাহাড় থেকে অনবরত স্বচ্ছ পানির ধারা বহমান। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় কয়েকগুন। এ সময়ে মূল ধারায় স্রোত অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে সীমানা চিহ্ণিত করা নেই এখানে। জায়গাটিতে তাই সাবধানে বেড়ানো উচিৎ। বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত অংশে চলে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। সাঁতার জানা না থাকলে এ ভ্রমণে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নেওয়া উচিৎ। তাছাড়া ভ্রমণে গিয়ে কোনো বর্জ্য জায়গাটিতে ফেলে আসবেন না।
কী ভাবে যাবেন?
বিছনাকান্দির এমন সৌন্দর্য বরষা চলে গেলে বা পানি কমে গেলে আর থাকেনা। তখন এটা একটা মরুদ্যান মতো লাগে। পাথর বহন করার জন্য এখানে চলে অজস্র ট্রাক আর ট্রাকটর। সুতরাং অক্টোবর পর্যন্ত বিছনাকান্দি যাবার মোক্ষম সময়। মন চাইলে এখনি চলে যেতে পারেন।ঢাকা থেকে প্রথম আপনাকে সিলেট শহরে যেতে হবে। তার পর সেখান থেকে বিছনাকান্দি যাবার কয়েকটা পথ রয়েছে। আপনি চাইলে নদী পথে যেতে পারেন।
আবার সড়কপথে নিজস্ব বাহন, সিএনজি চালিত অটো রিকসা কিংবা লেগুনা ভাড়া করে দল বেঁধে যেতে পারেন। নদী পথে গেলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে পাংখুমাই। সেখান থেকে ট্রলারে চেঁপে বিছনাকান্দি। পাংখুমাই হয়ে বিছনাকান্দি গেলে বাড়তি পাওনা এখানকার বিশাল ঝর্না আর পিয়াইন নদীর অপরূপ রূপসূধা। পাংখুমাই যেতে সময় লাগে দেড়ঘন্টা। সেখান থেকে বিছনাকান্দি আরও দেড় থেকে দুই ঘণ্টার পথ। সড়কপথ হলে সিলেট শহর থেকে যে কোন বাহনে চেপে চলে যান হাদারপার বাজার। সেখান থেকে নৌকায় বিছনাকান্দি।
যেভাবেই যান হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিঁচুড়ি খালি পেটে অমৃত সুখ দেবে আপনাকে। তবে আপনার জন্য আমাদের পরামর্শ সড়ক পথে বিছনাকান্দি যাওয়া। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে হাদারপার খেয়াঘাঁটে নৌকার মাঝি যাচ্ছে তাই ভাড়া চাইবে। দরদাম ঠিক করে কম পক্ষে তিন ঘণ্টার জন্য হাদার পার থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে তবেই বিছনাকান্দির পথ ধরুন। ঘুরে আসুন প্রকৃতির রাণী বিছনাকান্দি থেকে আপনি যদি রাতের বাসে ঢাকা থেকে সিলেটের বাসে চড়েন। তাহলে সকালেই আপনাকে শহরে নামিয়ে দিবে। দিনটি যদি মেঘাবৃত আকাশ আর বৃষ্টিঝরা দিন হয়, তাহলে আপনি খুবই সৌভাগ্যবান!
কারণ দিনটি এমন না হলে বিছনাকান্দির সৌন্দর্য ঠিক বোঝা যায়না! সিলেট থেকে সকালে বৃষ্টি মধ্যে রওনা দিতে পারলে আপনার মন খুশিতে নেচে উঠবে। বিছনাকান্দি যাওয়ার পথে আপনি মালিনিছড়া চা বাগান সালুটিকর আর বিমান বন্দর রোড হয়ে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন হাদারপার বাজার। এখানে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।
তারপর হাদারপার বাজারের বিখ্যাত ভূনা খিচুরী খেয়ে হাদারপার খেয়াঘাট থেকে নৌকায় চেঁপে বিছনাকান্দি যেতে পারেন। নৌকা আপনাকে নিয়ে যতই বিছনাকান্দির দিকে যাবে ততই আপনার কাছে মনে হতে থাকবে বিছনাকান্দির সৌন্দর্যছটা যেন উপচে বের হচ্ছে। সঙ্গে মিলেমিশে একাকার নদীর এপার আর ওপারের অপার সৌন্দর্য। এভাবেই ঠিক পনের মিনিট পর আপনি পৌঁছে যাবেন বিছনাকান্দি।ঘুরে আসুন প্রকৃতির রাণী বিছনাকান্দি থেকে।
কোথায় থাকবেন
ব্যস্ত মানুষেরা ঢাকা থেকে রাতের বাসে যাত্রা করে সারাদিন ঘুরে আবার পরের রাতে ফিরতে পারেন। তবে এই জায়গায় সময় নিয়ে বেড়াতে ভালো লাগবে। সারাদিন বেড়ানো শেষে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেটে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS